ইতালিতে আগামী তিন বছরে পরিবহণ, কৃষি, নির্মাণ, উৎপাদনসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলো থেকে অন্তত পাঁচ লাখ বিদেশি কর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে।
২০২৬–২০২৮ সালের জন্য ইতালি সরকারের অনুমোদিত নতুন ‘ফ্লো ডিক্রি’ (ডেক্রেতো ফ্লুসি) প্রকাশিত হয়েছে চলতি বছরের ১৫ অক্টোবর। এতে মৌসুমি, অ-মৌসুমি কর্মী এবং ফ্রিল্যান্সার–উদ্যোক্তাদের জন্যও সীমিত সুযোগ রাখা হয়েছে।
এই ডিক্রি বিদেশি কর্মীদের জন্য নিয়মিত অভিবাসনের পথ খুলে দিলেও প্রতারণা ও শোষণের ঝুঁকি এখনও বিদ্যমান বলে সতর্ক করেছে অভিবাসন বিশ্লেষকেরা।
ফ্লো ডিক্রি হলো ইতালি সরকারের এমন পরিকল্পনা, যার মাধ্যমে ইইউ’র বাইরের দেশগুলো থেকে কতজন কর্মী ইতালিতে কাজের জন্য যেতে পারবেন, কোন খাতে নিয়োগ হবে এবং কী শর্তে আবেদন করা যাবে- তা নির্ধারণ করা হয়। নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করাই এর মূল লক্ষ্য।
নতুন ডিক্রি অনুযায়ী ২০২৬-২০২৮ সালে মোট ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৫৫০টি কাজের অনুমতি দেওয়া হবে। অর্থাৎ প্রতি বছর ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৫০ জন বিদেশি কর্মী ইতালিতে কাজের সুযোগ পাবেন।
২০২৮ সালের ফ্লো ডিক্রি সম্পর্কে আরো তথ্য ইতালির শ্রম ও সামাজিক নীতি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এটিকে ‘জীবনরক্ষাকারী ব্যবস্থা’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছে, নিয়মিত অভিবাসনের পথ প্রসারিত হওয়ায় শ্রমবাজার এবং মানবিক সুরক্ষা দুটোই নিশ্চিত হবে।
যেসব খাতে অ-মৌসুমি কর্মী নেয়া হবে: পরিবহন ও সরবরাহ, ধাতব ও যান্ত্রিক কাজ, পর্যটন, কৃষি ও কৃষিজ পণ্য, নির্মাণ, উৎপাদন। এছাড়া স্বনির্ভর ব্যক্তি- উদ্যোক্তা, ফ্রিল্যান্সার, শিল্পী ও স্টার্ট-আপদের জন্যও আলাদা পারমিট রয়েছে।
যারা অগ্রাধিকার পাবেন:
ইতালির সঙ্গে অভিবাসন সহযোগিতাকারী দেশের কর্মী
ভেনেজুয়েলা বা তালিকাভুক্ত দেশে ইতালীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তি
রাষ্ট্রহীন ও শরণার্থী
পারিবারিক যত্ন ও সামাজিক-স্বাস্থ্য সহায়তাকারী
মৌসুমি কর্মীদের সুযোগ
মূলত কৃষি ও পর্যটন খাতে মৌসুমি কর্মী নেয়া হবে। গত পাঁচ বছরে ইতালিতে মৌসুমি কাজ করেছেন- এমন কর্মীরাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবেন।
ইতালিতে থাকা অনিয়মিত অভিবাসীদের জন্য থাকবে বিশেষ সুযোগ। প্রশিক্ষণ শেষ করা রাষ্ট্রহীন বা শরণার্থী, ছাত্র বা প্রশিক্ষণ পারমিটধারী যারা ওয়ার্ক পারমিটে রূপান্তর করতে চান, গৃহস্থালি, বয়স্কদের সেবা বা স্বাস্থ্য সহায়তায় কর্মরত অভিবাস েছাড়াও কোনো কাগজপত্র না থাকলেও যদি নিয়োগকর্তা আবেদন করেন, সেক্ষেত্রে সুযোগ মিলতে পারে।
আবেদন প্রস্তুত করতে হবে ৭ ডিসেম্বর এর মধ্যে। ‘ক্লিক-ডে’-তে আবেদন জমা দিতে হবে-
১২ জানুয়ারি: কৃষি খাত (মৌসুমি)
৯ ফেব্রুয়ারি: পর্যটন খাত (মৌসুমি)
১৬ ফেব্রুয়ারি: সহযোগী দেশগুলোর অ-মৌসুমি কর্মী
১৮ ফেব্রুয়ারি: অন্যান্য অ-মৌসুমি কর্মী
আবেদনের সঙ্গে মজুরি, বাসস্থান ও প্রয়োজনীয়তার প্রমাণ না থাকলে আবেদন বাতিল হবে।
প্রতারণা ও জালিয়াতি বেড়েছে
একটি পাচারবিরোধী হটলাইন ২০২৪ সালকে ‘প্রতারণার বছর’ ঘোষণা করেছে।
২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধে বিভিন্ন মধ্যস্থতাকারী নিজেদের এজেন্ট পরিচয় দিয়ে চাকরি, ভিসা বা চুক্তির নামে অভিবাসীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। আলজেরিয়া, ভারত, মরক্কো, তিউনিশিয়া ও মিশরের কমপক্ষে ১৩৯ জন অভিবাসী এ ধরনের জালিয়াতির শিকার হয়েছেন বলে ইনফোমাইগ্রেন্টস জানিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন সুযোগ বাড়লেও প্রতারণা ও শোষণের ঝুঁকি রয়ে গেছে, তাই সচেতন থাকা জরুরি।
বৈরাগীবাজার নিউজ ডেস্ক
আইটি ল্যাব সলিউশন্স লি.