‘শিক্ষকরা আজীবন বঞ্চনার শিকার। তাদের সম্মান-মর্যাদার কথা বলা হয়, বলা হয় তারা জাতির মেরুদণ্ড। কিন্তু বাস্তবে বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধায় তারা সবচেয়ে পিছিয়ে। যেন শিক্ষকের ক্ষুধা নেই, সংসার নেই, সন্তান নেই। তিনি মহাপুরুষ, তাই তাঁর কিছুই লাগবে না– এই ধারণাই শিক্ষকতা পেশার সবচেয়ে বড় শত্রু।’ বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে মতবিনিময় সভায় এমন মন্তব্য করেছেন রাজধানীর সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক কাকলী মুখোপাধ্যায়।
গতকাল সোমবার জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে (নায়েম) ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০২৫ ও সরকারি সাত কলেজ শিক্ষা ক্যাডারের স্বার্থ সংরক্ষণ’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার সমিতি।
কাকলী মুখোপাধ্যায় বলেন, আমাদের অনেক সহকর্মী প্রভাষক হিসেবেই অবসর নিয়েছেন। ইতিহাসের একই পুনরাবৃত্তিতে আমরা আটকে আছি। প্রাথমিকের শিক্ষকরা একজন ক্লার্ক বা অ্যাকাউন্টেন্টের চেয়েও কম বেতন পান– এটাই বাস্তবতা।
তিনি বলেন, আমাদের ফ্রিজ করে রাখা হয়েছে। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষকরা বৈষম্যের শিকার। একজন প্রাথমিক শিক্ষক, একজন প্রাইভেট টিউটর বা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক– সবাই শিক্ষক। তাহলে বিসিএস শিক্ষককে আলাদা করে দেখা হবে কেন? আমাদের মর্যাদা কোথায়? শিক্ষক সমাজের এ অবস্থা জাতির ভবিষ্যতের জন্য শুভ নয়।
সাত কলেজের বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষকরা যে দাবি নিয়ে আন্দোলন করছেন, তা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, আমরা ক্যাডার চাই, ঢাকা থাকতে চাই– যেন এটা অপরাধ। অথচ আমরা লড়ছি প্রাপ্য মর্যাদা ও স্বীকৃতির জন্য। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি, কেউ আমাদের দাবি অগ্রাহ্য করতে পারবে না।
বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক তামান্না বেগম বলেন, রাষ্ট্র শিক্ষকদের কিছু দিতে গেলেই দরিদ্র হয়ে পড়ে– এমন ধারণা বদলাতে হবে। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরোলেও শিক্ষকরা প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত। তবু তারা সীমিত সুযোগ ও সামর্থ্য নিয়ে জাতি গঠনের কাজ করে যাচ্ছেন নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগের সঙ্গে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার সমিতির আহ্বায়ক অধ্যাপক খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল। পরিচালনা করেন সংগঠনের সদস্য সচিব ড. মাসুদ রানা খান।
মাসুদ রানা খান বলেন, শিক্ষকদের মানোন্নয়ন ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি ছাড়া দেশের শিক্ষার গুণগত পরিবর্তন সম্ভব নয়। মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষকতায় আগ্রহী করতে হলে উপযুক্ত পরিবেশ ও প্রণোদনা তৈরি করতে হবে।
অধ্যাপক সোহেল বলেন, শিক্ষকদের পদোন্নতি ও গ্রেড বৈষম্য নিরসন এখন সময়ের দাবি। সরকারি কলেজের অধ্যাপকদের অধিকাংশই দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত রয়েছেন। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে হলে শিক্ষকদের ন্যায্য মর্যাদা ও প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজসহ সরকারি সাত কলেজের অধ্যাপক ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা সভায় অংশ নেন।
বৈরাগীবাজার নিউজ ডেস্ক
আইটি ল্যাব সলিউশন্স লি.