গভীর রাতে যখন সিলেট নগরী নিস্তব্ধ। দোকানপাট বন্ধ, রাস্তায় গুটিকয়েক গাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই না। কাঁধে ওয়াকিটকি, পুলিশ সদস্যদের নিয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. সারওয়ার আলম ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. আব্দুল কুদ্দুছ চৌধুরী পার করছেন ব্যস্ত সময়। নেমেছেন ‘মিডনাইট অ্যাকশনে’। কাজ করছেন দখলমুক্ত, পরিচ্ছন্ন ও শৃঙ্খলিত সিলেট গড়ার। দিনভর ব্যস্ততার পরও শহরের অলি-গলি, ফুটপাত, স্টেশনসহ সবখানে চলছে প্রতিনিয়ত প্রশাসনের টানা অভিযান।
বৈরাগীবাজারনিউজডটকম
নগরীতে অবৈধ ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, ফুটপাত দখল, হকারদের সিন্ডিকেট ও রেলওয়ের জমি দখলসহ সব কিছুর বিরুদ্ধেই কড়া অবস্থান নিয়েছে জেলা প্রশাসন ও এসএমপি পুলিশ। নগরীকে দখলমুক্ত, পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক রূপে গড়ে তুলতে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নগরীর অলি-গলি, ফুটপাত, রেলস্টেশনসহ সবখানেই চলছে প্রশাসনের টানা অভিযান। নির্ঘুম প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সিলেটবাসীর জন্য এদিক থেকে সেদিক ছুটে বেড়াচ্ছেন। নানা বিষয়ে দিক-নির্দেশনাসহ অভিযান পরিচালনা করছেন। তাদের এই রাতভর উপস্থিতি এখন শহরের চায়ের দোকানে আলোচনার শীর্ষ বিষয়।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি সিলেট নগরীর ফুটপাত সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন করতে, যানজট মুক্ত নগরী ও হকার মুক্ত নগরী গড়তে এবং অবৈধ ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করে আসছেন। সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত সিলেটের অলি-গলি থেকে শুরু করে, রেলওয়ে স্টেশনসহ প্রত্যেকটি জায়গায় সিন্ডিকেটমুক্ত এবং দালালমুক্ত করতে নিয়মিত তারা এই অভিযান করছেন।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ রোডে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে, যানজট নিরসন করতে এবং ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে তিনি অভিযান পরিচালনা করেছেন।
সিলেট রেলস্টেশনের খাস জায়গা দখল করে একের পর এক স্থাপনা গড়ে ওঠায় সাম্প্রতিক সময়ে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। সিলেট রেলস্টেশন এলাকা জুড়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা এসব দখল উচ্ছেদে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। রেলের জমিতে গড়ে ওঠা দোকান, ঘরবাড়ি ও ধর্মীয় স্থাপনাসহ নানা অবৈধ কাঠামো চিহ্নিত করে সরানোর নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে পাশাপাশি তা অপসারণ করা হচ্ছে। এর আগে, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে গত ১৬ অক্টোবর রেলস্টেশন এলাকা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। এ সময় রেলস্টেশন এলাকায় জমি দখল করে গড়ে ওঠা বেশ কয়েকটি দোকান বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে গতকাল বুধবার (২২ অক্টোবর) মধ্যরাতেও হঠাৎ সিলেটের রেলস্টেশনে এলাকায় অভিযানে যান সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম। ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি সিলেটের রেলস্টেশনের জমিতে নির্মিত মসজিদটি সরিয়ে নিতে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন।
এর আগে রবিবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সিলেটের জিন্দাবাজার পয়েন্ট থেকে বন্দরবাজারের মধুবন সুপার মার্কেট পর্যন্ত রাজপথ ও ফুটপাত পরিদর্শন করেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারোয়ার আলম, সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. আব্দুল কুদ্দুছ চৌধুরী পিপিএম ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজা-ই রাফিন সরকার। সিলেট নগরীর রাজপথ থেকে হকারদের উচ্ছেদ এবং ফুটপাত ও রাজপথ দখল মুক্ত করতে প্রশাসনের অভিযান সিলেট নগরবাসীর ভাগ্যে নতুনত্ব সৃষ্টি করতে সিলেটের রাজপথে একসাথে দেখা যায় এই তিনজনকে। এসময় তারা নগরীর দোকানদার, পথচারী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে নগরীকে পরিচ্ছন্ন ও দখলমুক্ত রাখতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম বলেন, ‘হকাররা আজ ফুটপাথ বা রাজপথে বসেননি। আমাদের নির্দেশনা তারা মেনেছেন সেজন্য তাদের ধন্যবাদ। তাদের জন্য লালদিঘীরপার অস্থায়ী হকার্স মার্কেট প্রস্তুত করায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনকেও ধন্যবাদ। পুলিশ প্রশাসন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ফুটপাত মুক্ত করার অভিযানে অংশগ্রহণ করেছে। তিনি তাদেরকেও ধন্যবাদ জানিয়ে নগরবাসীকে কেনাকাটার জন্য লালদিঘীরপার মার্কেটে যাওয়ার আহ্বান জানান।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি জায়গা দখল করে কোনো ধরনের স্থাপনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সরকারি জায়গায় কোনো ধরনের মালিকানা স্থাপনা থাকবে না। কোনো সিন্ডিকেট থাকবেনা, কোনো দালাল থাকবে না। আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছি। আমাদের এই অভিযান ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত থাকবে।’
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার আব্দুল কুদ্দুছ চৌধুরী পিপিএম বলেন, ‘হকারদের উচ্ছেদের পর আবার সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা লেগুনার দখলে রাজপথ ফুটপাত চলে যেতে দেওয়া হবেনা। হকার সরানোর পর যদি আবার লেগুনা বা সিএনজি অটোরিকশা ফুটপাত দখল করে। তাহলে সব পরিশ্রম বিফলে যাবে। অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদ বা গাড়ি পার্কিংয়ের বিষয়গুলো আমাদের নজরে আছে। অবৈধ স্ট্যান্ড ও পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চলবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিপণিবিতান তৈরির সময় যদি পার্কিংয়ের কথা চিন্তা করা হতো, তাহলে আজ এমন বিশৃঙ্খলা তৈরি হতো না। এখন থেকে সবাই আইন মানলে, সিলেটবাসী এক শান্ত ও শৃঙ্খল নগরী উপহার পাবে।’
এদিকে নগরবাসীর অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ‘মিডনাইট অ্যাকশন টিমের’ প্রশংসা করছেন। কেউ বলছেন, ‘এমন প্রশাসন থাকলে পরিবর্তন হবেই।’
বৈরাগীবাজার নিউজ ডেস্ক
আইটি ল্যাব সলিউশন্স লি.