গাজার অবরোধ ভাঙার সাহসী অভিযাত্রায় 'গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা'র পর্যবেক্ষক জাহাজ 'সামারটাইম জং'-এর আরোহী হয়ে বিশ্বব্যাপী সবার নজরে আসেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নারী রুহি লোরেন আকতার।
ভূমধ্যসাগর দিয়ে গাজার দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় তিনি সমুদ্র-ঢেউ আর নীল আকাশের পটভূমিতে সিলেটি উচ্চারণে বাংলায় তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে যাচ্ছিলেন। তিনি কেন এই ঝুঁকি নিয়ে গাজার অভিমুখে ছুটছেন, সেই কারণগুলো সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেন, যা বিশ্ব নজরে রাখছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি একজন মানবাধিকার কর্মী এবং 'রিফিউজি বিরিয়ানি অ্যান্ড ব্যানানা (আরবিবি)'-এর প্রতিষ্ঠাতা, যা শরণার্থীদের সহায়তায় কাজ করে আসছে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু করা ফ্লোটিলার বহরে একমাত্র বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রতিনিধি হিসেবে তিনি অংশ নেন।
এক ভিডিও বার্তায় রুহি নিজের পরিচয় তুলে ধরে বলেন, 'আমার নাম রুহি লোরেন আকতার। আমি মূলত বাংলাদেশের সিলেটি বংশোদ্ভূত। জন্ম ইংল্যান্ডের নিউক্যাসলে।' তিনি একজন অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ এবং ব্রিটিশ সরকারের হয়ে কাজ করেছেন। প্রায় ১০ বছর আগে তিনি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং তখনই বিশেষ করে সিরিয়ার যুদ্ধে দুর্গত মানুষকে সহায়তার জন্য আরবিবি প্রতিষ্ঠা করেন।
তিনি গাজা, সুদান, বসনিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের কাছে গিয়ে সহায়তা করেছেন এবং বিশেষভাবে শরণার্থীদের তিনি সহায়তা দেন। তিনি বলেন, 'আমি আমার চাকরি ছেড়েছি মানুষের জন্য নিবেদিত হয়ে কাজ করতে।' ভূমধ্যসাগরের জাহাজ থেকে রুহি জানান, তিনি একটি পর্যবেক্ষক নৌযানে আছেন, যার উদ্দেশ্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা।
ফ্লোটিলার সবগুলো জাহাজ ইসরায়েল কর্তৃক জব্দ হওয়ার আগে গাজার কাছাকাছি জলসীমায় প্রবেশের পর সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় রুহি বলেন, তিনি গাজায় যাচ্ছেন কারণ সেখানে গণহত্যা চলছে। তিনি বলেন, একসময় বাংলাদেশও লড়াই করেছে, এ কারণে তাদের সঙ্গে আমাদের মিল রয়েছে। তার মতে, মানুষ যেখানেই হোক—ফিলিস্তিন, কঙ্গো, সুদান, বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্তানে—তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব।
এই অভিযানে তার অংশগ্রহণের মূল কারণ ব্যাখ্যা করে রুহি বলেন, 'আমি এখানে এসেছি আজকের মানুষের জন্য এবং আগামী দিনের শিশুর জন্য। অনাগত শিশুরা যাতে জানতে পারে—আমরা তাদের জন্য লড়াই করছিলাম। যখন নির্মমতা ও অবিচার সংঘটিত হচ্ছিল, আমরা তাদের জন্য লড়েছিলাম।' তিনি আরও জানান, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হিসেবে এই অভিযাত্রায় অংশ নিয়ে তিনি অন্য ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকতে চান।
রুহি জানান, তিনি দুই মাস ধরে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার সঙ্গে আছেন। প্রথমে কায়রো গিয়ে গাজা নিয়ে প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন। সম্প্রতি তিনি তিউনিসিয়ায় গিয়ে ফ্লোটিলার আয়োজকদের কাছে সমুদ্র যাত্রার প্রশিক্ষণ নেন এবং সেখান থেকে ইতালিতে গিয়ে জাহাজ বহরে যোগ দেন। গাজার নিকটবর্তী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার রুহি ইনস্টাগ্রাম ভিডিওতে নৌযানগুলোর পরিণতি সম্পর্কে খবর দিচ্ছিলেন।
তিনি বলেন, গত রাতে শিশুখাবারসহ গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ বহনকারী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার জাহাজ আটকে দিয়েছে ইসরায়েলের নৌবাহিনী। তিনি এটিকে 'অত্যন্ত বেদনাদায়ক লঙ্ঘন' হিসেবে আখ্যায়িত করেন। ইসরায়েলের নৌবাহিনী একে একে ফ্লোটিলার ৪২টি নৌযান জব্দ করেছে এবং সব আরোহীকে নিয়ে গেছে।
বৈরাগীবাজার নিউজ ডেস্ক
আইটি ল্যাব সলিউশন্স লি.