জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল গতকাল বুধবার। সকালে তাঁর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়। দিনভর আলোচনা সভা, গান, কবিতা, নৃত্যসহ সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে কবিকে স্মরণ করা হয়।
কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাঁর সমাধিস্থলে কবির পরিবার, অনুরাগী ও শুভানুধ্যায়ীরা ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জড়ো হন সকাল থেকে। সমাধি প্রাঙ্গণ মুখর হয়ে ওঠে নজরুলের গান, আলোচনা ও স্মৃতিচারণে।
সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কবির নাতনি খিলখিল কাজী, ভাষাবিদ সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ প্রমুখ। শ্রদ্ধা নিবেদন আয়োজনে সভাপতি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে শুরু করে নজরুল ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি, নজরুলসংগীত শিল্পী সংস্থা, উদীচীসহ নানা সংগঠন কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এ ছাড়া বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
সমাধি প্রাঙ্গণে সংগীত বিভাগের শিল্পীরা পরিবেশন করেন ‘বাগিচায় বুলবুলি’, ‘তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে’সহ বেশ কয়েকটি গান।
বাংলা একাডেমিতে সেমিনার
নজরুল-গবেষক অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল হক বলেছেন, উপমহাদেশে আজও রাষ্ট্র ও সমাজ বিভেদের, পরস্পর অবিশ্বাসের, সন্দেহের জন্ম দিয়ে যাচ্ছে। মানবতাবাদী প্রেমিক কবি নজরুলের অদ্বৈতবাদী, সমন্বয়ী চেতনাকে কর্মে ধারণ করার এখনই সময়। গতকাল বিকেলে বাংলা একাডেমিতে সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে তিনি ‘নজরুলের মৌলচেতনা অদ্বৈতবাদী সমন্বয়ের’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। আলোচনায় অংশ নেন নজরুল-গবেষক ড. সৈয়দা মোতাহেরা বানু এবং কবি ও প্রাবন্ধিক কাজী নাসির মামুন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে আলোচনা সভা
ঢাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, আধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলনের সাহসী প্রতিচ্ছবি কাজী নজরুল ইসলাম। জাতি হিসেবে আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা জাতীয় কবিকে যথাযথ মর্যাদা দিতে পারিনি।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী বলেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে নজরুলের কবিতা, গান বাংলার বিপ্লবীদের উৎসাহিত করে। তাঁর গান একইভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহিত করে।
কাজী নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু উপস্থিত ছিলেন।
ছায়ানটে গান, কবিতা ও নৃত্য
ছায়ানট মিলনায়তনে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় আয়োজন করা হয় গান, কবিতা ও নৃত্য অনুষ্ঠান। এতে উঠে এসেছে কবির ভক্তি, প্রেম, বিদ্রোহ ও মানবতার বাণী।
সম্মেলক গান ‘ভবানী শিবানী’ দিয়ে সূচনা হয় অনুষ্ঠানটির। এরপর একে একে পরিবেশিত হয় নজরুলসংগীতের সম্ভার। গেয়েছেন সুপ্রিয়া দাশ, পরিতোষ কুমার মণ্ডল, মিরাজুল জান্নাত সোনিয়া, প্রিয়ন্তু দেব, আফরোজা খান মিতা, মোহিত খান, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী, শাহীন সামাদ, রেজাউল করিমসহ আরও অনেকে।
গানের ফাঁকে পাঠ পরিবেশন করেন জাহীদ রেজা নূর ও সুমনা বিশ্বাস। তাদের কণ্ঠে ফুটে ওঠে নজরুলের দুঃসাহসী, প্রগতিশীল ও ভক্তিময় বাণী। ‘খেলে নন্দের আঙিনায়’ গানের সঙ্গে ছিল সম্মেলক নৃত্যগীত, যা দর্শকের মন ছুঁয়ে যায়।
নজরুল ইনস্টিটিউটে হামদ-নাত
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউটের অডিটোরিয়ামে বিকেলে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী নজরুল’ শীর্ষক আলোচনা, হামদ-নাত ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করা হয়। ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মো. লতিফুল ইসলাম শিবলীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন কবির নাতনি খিলখিল কাজী।
প্রধান আলোচক ছিলেন প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সালমা আক্তার খুকী ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক (উপসচিব) কে এম আল-আমীন। স্বাগত বক্তব্য দেন ইনস্টিটিউটের উপপরিচালক সুবর্ণা শিরিন। দোয়া পরিচালনা করেন মাওলানা মাহমুদুল হক জালিছ। একক সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফাতেমা-তুজ-জোহরা ও সালাউদ্দিন আহমেদ। সঞ্চালনা করেন ইনস্টিটিউটের সহকারী পরিচালক ফখরুল আলম।
বৈরাগীবাজার নিউজ ডেস্ক
আইটি ল্যাব সলিউশন্স লি.