আজ রবিবার | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

 শিরোনাম
২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপ: কঠিন গ্রুপে কোন দল, কারা পেল সহজ প্রতিপক্ষ নির্বাচন ভণ্ডুল করার পায়তারা চলছে: শফিকুর রহমান ওসমানী বিমানবন্দরে বিদেশী সিগারেট ও ৬ আইফোন জব্দ বিয়ানীবাজার উপজেলা ছাত্র জমিয়তের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশনেত্রীর দিকে চেয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকা প্রয়োজন : অ্যাড. এমরান আহমদ চৌধুরী খালেদা জিয়ার জন্য সারা দেশে বিশেষ দোয়া সিলেটে হাজারও দৌড়বিদের অংশগ্রহণে হাফ ম্যারাথন এক রাসূলপ্রেমিকের কালজয়ী প্রেমগাথা: কাসিদায়ে বুরদা সহকারি শিক্ষকদের শাটডাউন: বড়লেখায় কক্ষের তালা ভেঙে পরীক্ষা নিলেন অভিভাবকরা সিলেট বিভাগের আরও ৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা

সিলেটের উন্নয়নের দাবিতে নিউইর্য়কে মানববন্ধন

সিলেটের উন্নয়নের দাবিতে নিউইর্য়কে মানববন্ধন

নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার্সিটি প্লাজায় ১৫ অক্টোবর বিকেলে এক ব্যতিক্রমী সমাবেশে জড়ো হয়েছিলেন সিলেট অঞ্চলের প্রবাসীরা। নামকরণে অনন্য এই সংগঠন—“বিরক্ত সিলেটবাসী নিউইয়র্ক”—তাদের ক্ষোভ, বেদনা ও আশাভরসার ভাষা খুঁজে নিয়েছে এই এক শব্দে: বিরক্তি। এই বিরক্তিই যেন হয়ে উঠেছে সিলেট অঞ্চলের দীর্ঘদিনের উন্নয়ন বঞ্চনার বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদের প্রতীক।

 

স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গেলেও বৃহত্তর সিলেটের চিত্রে আশার আলো এখনো ম্লান। সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ—এই চার জেলার মানুষ এখনো মনে করেন, উন্নয়ন যেন তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছায় না। অথচ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার অন্যতম প্রধান উৎস এই প্রবাসী সিলেটবাসীরাই। তাদের রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখছে, অথচ নিজ অঞ্চলই পড়ে আছে প্রশাসনিক অবহেলার ছায়ায়।

 

সমাবেশে বক্তারা বলেন, “দেশ স্বাধীন হয়েছে পঞ্চাশ বছর আগে। কিন্তু সিলেট এখনো যেন প্রশাসনিক অবহেলা ও রাজনৈতিক প্রান্তিকতার বলয় থেকে মুক্ত হতে পারেনি।” তাদের কণ্ঠে ছিল ক্ষোভ, কিন্তু সেই ক্ষোভের ভেতরেই ছিল এক গভীর মমতা—নিজ ভূমির প্রতি, নিজ পরিচয়ের প্রতি।

 

এই সমাবেশের পরিচালনা করেন সাংবাদিক ও সংগঠক ইব্রাহীম চৌধুরী খোকন। উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন সেলিনা উদ্দিন, মাহবুব রহমান, শাহ মুজিবুর রহমান জকন প্রমুখ। 

বক্তারা এক কণ্ঠে বলেন, “যদি এই বঞ্চনা চলতেই থাকে, তাহলে বিরক্তি বিক্ষোভে পরিণত হবে, আর বিক্ষোভ হয়তো একদিন বিচ্ছিন্নতার পথে গড়াবে।”

 

তাদের ভাষায়, এই আহ্বান কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা নয়; এটি ন্যায্য অধিকার ও সমান উন্নয়নের দাবি।

 

সমাবেশ শেষে “বিরক্ত সিলেটবাসী নিউইয়র্ক” বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে একটি স্মারকলিপি প্রেরণ করে। এতে তারা তুলে ধরেছেন বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের দীর্ঘদিনের উন্নয়ন বঞ্চনা, বৈষম্য, এবং অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপের দাবি।

 

স্মারকলিপিতে বলা হয়, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরও সিলেট অঞ্চল অবহেলিত। রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা, হাসপাতালের সেবা করুণ, রেললাইন জরাজীর্ণ, বিমানবন্দর সীমিত ক্ষমতার। উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন হলেও তহবিলের অর্থ ছাড় হয় না—অগ্রগতি থেমে থাকে কাগজে-কলমে।

 

বক্তারা বলেন, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে, কারণ একটি অঞ্চলের নামেই যখন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আছে, সেখানে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট কেন সীমিত থাকবে—এই প্রশ্ন এখন সময়ের দাবি। একই সঙ্গে ঢাকা–সিলেট মহাসড়ককে দ্রুত ছয় লেনে উন্নীত করা, রেলপথ সংস্কার ও নতুন আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা, এমনকি সিলেট–কক্সবাজার সরাসরি ট্রেন সার্ভিস চালুর বিষয়টিও তাঁরা জরুরি দাবি হিসেবে উত্থাপন করেন।

 

এছাড়া বক্তারা সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (SDA) কার্যকর করে তার অধীনে উন্নয়ন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান। প্রবাসীদের স্থাবর সম্পত্তি রক্ষায় আইনগত নিশ্চয়তা দিতে হবে, প্রতিটি জেলায় প্রবাসী বিষয়ক মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে এবং বিমানবন্দর ও সরকারি অফিসে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে বলেও তাঁরা আহ্বান জানান।

 

চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতে উন্নয়নের দাবিও ছিল জোরালো। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আধুনিকায়ন, অফিস-আদালতে ঘুষ বন্ধ করা, সিলেটের বিদ্যুৎ সরবরাহে স্থানীয় উৎপাদনকে অগ্রাধিকার দেওয়া—এসব দাবি বক্তৃতায় ঘন ঘন উঠে আসে। বক্তারা বলেন, সিলেটের নদী-খাল রক্ষা করতে হবে, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হবে এবং পর্যটন এলাকাগুলো সরকারি উদ্যোগে সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করতে হবে।

 

তারা আরও বলেন, সিলেট–ঢাকা বিমানে শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ছাড় চালু করা উচিত এবং সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেশে ও বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য বৃত্তি চালু করতে হবে—যা হবে সিলেটের ভবিষ্যৎ প্রজন্মে বিনিয়োগ।

 

বক্তারা একবাক্যে বলেন, “সিলেটের উন্নয়ন মানে শুধু সিলেট নয়, এটি বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত।”

 

ডাইভার্সিটি প্লাজার আকাশে বিকেলের আলোয় উড়ছিল নানা ব্যানার ও পোস্টার—

“সিলেটের উন্নয়ন চাই,”

“বঞ্চনার অবসান চাই,”

“প্রবাসী সিলেটবাসীর দাবি বাস্তবায়ন কর।”

 

বক্তাদের ভাষায়, এটি শুধু একটি সমাবেশ নয়, এটি এক চেতনার পুনর্জাগরণ। প্রবাসের মাটিতে দাঁড়িয়ে সিলেটবাসীরা যেন আবারও তাদের মাতৃভূমির প্রতি এক নব প্রতিশ্রুতি উচ্চারণ করলেন—

 

“আমরা সিলেটের উন্নয়ন চাই,

আমরা সমান অধিকার চাই,

আমরা বঞ্চনার অবসান চাই।”

পূর্ববর্তী খবর পড়ুন

কাজী নজরুল ইসলাম (২৪ মে ১৮৯৯ – ২৯ আগস্ট ১৯৭৬)

পরবর্তী খবর পড়ুন

জসীম উদ্‌দীন (১ জানুয়ারি ১৯০৩ - ১৩ মার্চ ১৯৭৬)