গত বৃহস্পতিবার জানা গিয়েছিল মধ্যরাতে অথবা পরের দিন শুক্রবার বিদেশ নেওয়া হবে খালেদা জিয়া। শুক্রবার জানানো হলো কাতারের আমিরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কারিগরি ত্রুটি। শুক্রবারের বিদেশযাত্রা ঠেকল গিয়ে রোববারে। রোববারে এসে জানা গেল, এখনই বিদেশ নয়; খালেদা জিয়াকে দেশেই দেওয়া হবে চিকিৎসা।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। রোববার (৭ ডিসেম্বর) তার সিটি স্ক্যানসহ কয়েকটি পরীক্ষা করা হয়েছে। এইসব পরীক্ষার রিপোর্ট ভালো এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে দেশে রেখেই সুস্থ করা এবং বিদেশে না নেওয়ার চিন্তা করছে তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড। যদিও এ বিষয়ে বোর্ড এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি।
রোববার রাতে বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন এসব তথ্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই চিকিৎসক বলেন, ‘আগের চেয়ে ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) সুস্থ আছেন। আমরা চেষ্টা করছি দেশেই সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিতে। আমাদের বিশ্বাস তিনি দেশের চিকিৎসাতেই সেরে উঠবেন। এর আগে উনার অবস্থা আরও বেশি ক্রিটিক্যাল ছিল। তখনো সেরে উঠেছিলেন। দোয়া রাখেন, লন্ডন নেওয়ার প্রয়োজন না-ও হতে পারে। আজ (রোববার) সিটি স্ক্যান, ইসিজিসহ কয়েকটি টেস্ট করা হয়েছে। সেগুলোর রেজাল্টও ভালো এসেছে।’
খালেদা জিয়াকে আর কতদিন সিসিইউতে রাখা হবে- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি নির্ভর করছে ম্যাডামের শারীরিক অবস্থার ওপর। দেশি-বিদেশি চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। উনার পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান শয্যাপাশে থেকে চিকিৎসার বিষয়গুলো সমন্বয় করছেন। তিনি বেশ কয়েকদিন দেশেই থাকবেন।’
খালেদা জিয়া কথা বলতে পারছেন কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে এই চিকিৎসক বলেন, ‘কিছুটা বলার চেষ্টা করছেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। উনার ছোট ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী, দুই পুত্রবধূ সর্বক্ষণ পাশে আছেন। তাদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কথা বলার চেষ্টা করছেন।’
এদিকে, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের জন্য কাতার সরকারের সঙ্গে সর্বক্ষণ যোগাযোগ রাখছেন বিএনপির পক্ষ থেকে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী। জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসনকে লন্ডনে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিতে কাতারের রয়্যাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রয়েছে। মেডিকেল বোর্ড ‘খালেদা জিয়াকে ফ্লাই করার উপযোগী’ বলে সিদ্ধান্ত দিলেই বিশেষায়িত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকায় পৌঁছাবে।
এনামুল হক চৌধুরী গতকাল বলেন, ‘মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নিলেই তাকে লন্ডনে নেওয়া হবে। আর যখনই বিএনপি চাইবে তখন কাতার সরকার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করবে। এতে কোনো সমস্যা হবে না। এখন আমরা বোর্ডের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি সকালে ম্যাডামকে সিসিইউতে দেখে এসেছি। তিনি আগের চেয়ে ভালো আছেন। সাড়া দিচ্ছেন। আশা করি, সবার দোয়ায় তিনি ওভারকাম করবেন। বোর্ড সিদ্ধান্ত নিলে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেওয়া হবে।’
গত ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসে সেনানিবাসে যান খালেদা জিয়া। এরপর সেখান থেকে ফিরে অসুস্থ হয়ে গেলে গত ২৩ নভেম্বর রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য বিএনপি চেয়ারপরসনকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং ওই রাতেই তাকে সেখানে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে ২৭ নভেম্বর তাকে নেওয়া হয় ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ)। সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন আছেন। ৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘ দিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসের পাশাপাশি কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে এভারকেয়ার হাসপাতালের এক ডজন চিকিৎসক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার চিকিৎসার তদারকি করছেন।
বৈরাগীবাজার নিউজ ডেস্ক
আইটি ল্যাব সলিউশন্স লি.