আজ রবিবার | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

 শিরোনাম
আজ থেকে সিলেটে রাত সাড়ে ৯ টার পর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপ: কঠিন গ্রুপে কোন দল, কারা পেল সহজ প্রতিপক্ষ নির্বাচন ভণ্ডুল করার পায়তারা চলছে: শফিকুর রহমান ওসমানী বিমানবন্দরে বিদেশী সিগারেট ও ৬ আইফোন জব্দ বিয়ানীবাজার উপজেলা ছাত্র জমিয়তের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশনেত্রীর দিকে চেয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকা প্রয়োজন : অ্যাড. এমরান আহমদ চৌধুরী খালেদা জিয়ার জন্য সারা দেশে বিশেষ দোয়া সিলেটে হাজারও দৌড়বিদের অংশগ্রহণে হাফ ম্যারাথন এক রাসূলপ্রেমিকের কালজয়ী প্রেমগাথা: কাসিদায়ে বুরদা সহকারি শিক্ষকদের শাটডাউন: বড়লেখায় কক্ষের তালা ভেঙে পরীক্ষা নিলেন অভিভাবকরা

চিকিৎসায় নোবেলজয়ীরা কী আবিষ্কার করেছেন, কেন গুরুত্বপূর্ণ

চিকিৎসায় নোবেলজয়ীরা কী আবিষ্কার করেছেন, কেন গুরুত্বপূর্ণ

মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেম সাধারণত বাইরের আক্রমণকারী (যেমন-ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া) থেকে শরীরকে রক্ষা করে। কিন্তু কখনো কখনো ভুলবশত এটি আক্রমণকারীকে প্রতিরোধের বদলে শরীরের নিজস্ব কোষ বা অঙ্গকে আক্রমণ করে। অনেকটা কম্পিউটারের ম্যালফাংশন বা ত্রুটির মতো। মানবদেহে এটি ঘটলে তা অনেক সময় মৃত্যুর কারণ হয়।

এই ত্রুটিকে যে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব সেটিই গবেষণার মাধ্যমে দেখিয়েছেন সদ্য চিকিৎসায় নোবেলজয়ী তিন বিজ্ঞানী। তারা হলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের ইনস্টিটিউট ফর সিস্টেমস বায়োলজির সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মেরি ব্রাঙ্কো, সান ফ্রান্সিসকোর সোনোমা বায়োথেরাপিউটিকস এর বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ফ্রেড রামসডেল এবং জাপানের ওসাকা ইউনিভার্সিটির ইমিউনোলজি ফ্রন্টিয়ার রিসার্চ সেন্টারের বিশিষ্ট অধ্যাপক শিমন সাকাগুচি। 

দ্য নোবেল প্রাইজ কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স’ বা রোগ প্রতিরোধ করতে গিয়ে দেহের নিজস্ব অঙ্গের ক্ষতি এড়ানোর ব্যবস্থা আবিষ্কারের মাধ্যমে এই তিন বিজ্ঞানী যুগান্তকারী কাজ করেছেন।

যা নিয়ে গবেষণা
গবেষকদের কাজের মূল অংশ ছিল টি-সেল (সাদা রক্তকোষের একটি প্রকার) সম্পর্কে আরও ভালো বোঝাপড়া করা। এই টি-সেল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ কোষ। এটি সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। 

গবেষকরা যে কোষগুলো আবিষ্কার করেছেন, সেগুলোকে বলা হচ্ছে ‘রেগুলেটরি টি-সেল’ বা নিয়ন্ত্রক টি-সেল। জীবাণুকে আক্রমণ করতে গিয়ে শরীরের নিজস্ব কোষ বা অঙ্গের যাতে ক্ষতি না হয় নিয়ন্ত্রক টি-সেল সেটি নিশ্চিত করে। 

দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজস্ব অঙ্গ বা কোষকে আক্রমণ করলে দেখা দেয় অটোইমিউন রোগ। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এনভায়রনমেন্টাল হেলথ সায়েন্সেস (এনআইএইচ) বলছে, বিজ্ঞানীয় ৮০ ধরনের অটোইমিউন রোগ শনাক্ত করেছেন। যেমন টাইপ-১ ডায়াবেটিস। এই রোগগুলোর অধিকাংশের কোনও নিরাময় নেই। এবং কিছু ক্ষেত্রে উপসর্গ প্রশমনের জন্য আজীবন চিকিৎসার দরকার হয়।

নোবেল কর্তৃপক্ষ বলছে, বিজ্ঞানীদের এই অবিষ্কার ক্যানসার ও অটোইমিউন রোগের চিকিৎসা গবেষণায় অবদান রেখেছে। এটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রেও সাহায্য করতে পারে।

অপরিহার্য খেলোয়াড় টি-সেল

তিন বিজ্ঞানীয় গবেষণা নিয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়েছে দ্য নোবেল প্রাইজের ওয়েবসাইটে। সেখানে বলা হয়েছে, মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যেভাবে প্যাথোজেন বা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসের মতো অণুজীবকে শনাক্ত করে সেটি এক বিস্ময়কর ব্যাপার। এই অণুজীব বা সংক্রামকগুলো ভিন্ন ভিন্ন আকারের হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রেই এগুলোর মিল থাকে মানবদেহের কোষের সঙ্গে। তাই এখানে একটি প্রশ্ন ওঠে, ইমিউন সিস্টেম কীভাবে ঠিক করে কোন অণুজীবকে আক্রমণ করতে হবে এবং কোনটিকে রক্ষা করতে হবে? 

এটির উত্তর খুঁজে বের করেছেন নোবেল বিজয়ীরা। তারা ইমিউন সিস্টেমের ‘নিরাপত্তা প্রহরী’ হিসেবে রেগুলেটরি টি-সেল শনাক্ত করেছেন। এই টি-সেল দেহের প্রতিরক্ষায় অপরিহার্য খেলোয়াড়। 

মূলত দুই ধরনের টি-সেল আছে- হেলপার ও কিলার। হেল্পার টি-সেলগুলো নিয়মিত দেহের চারপাশে টহল দেয়। যদি এরা কোনো আক্রমণকারী সংক্রামক শনাক্ত করে, তবে অন্যান্য কোষকে সতর্ক করে। কিলার টি-সেল ভাইরাস বা অন্যান্য সংক্রামক দ্বারা সংক্রমিত কোষ ধ্বংস করে। এরা টিউমার কোষকেও আক্রমণ করতে পারে।

সব ধরেনের টি-সেলের উপরিভাগে বিশেষ প্রোটিন থাকে, যাটিকে টি-সেল রিসেপ্টর (গ্রাহক) বলা হয়। এই রিসেপ্টরগুলোকে তুলনা করা যেতে পারে সেন্সরের সঙ্গে। এগুলোর মাধ্যমে টি-সেল অন্য কোষগুলো স্ক্যান করে দেখে দেহ আক্রমণের মুখে আছে কিনা। ক্ষতিকর কোনো কিছুর উপস্থিতি পাওয়া মাত্রই রিসেপ্টরগুলো টি-সেলকে সংকেত পাঠায়- শরীর আক্রমণের মুখে পড়েছে।

১৯৮০-এর দশকে গবেষকরা বুঝতে পারেন, টি-সেল থাইমাস গ্রন্থিতে পরিপক্ব হয়। এখানেই সাধারণ টি-সেলগুলোকে ক্ষতিকর সংক্রামক চিনতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘সেন্ট্রাল টলারেন্স’।

ইঁদুরের ওপর প্রয়োগ

নোবেল বিজয়ী তিন গবেষকের একজন শিমন সাকাগুচি নিয়ন্ত্রক টি-সেল আবিষ্কার করেন ইঁদুরের ওপর গবেষণার মাধ্যমে। তিনি এই টি-সেল দিয়ে একটি ইঁদুরকে অটোইমিউন রোগ থেকে রক্ষা করেছিলেন। 

সাকাগুচি টি-সেল পৃথক করেন কোষের ওপর থাকা প্রোটিন দিয়ে। তিনি হেল্পার টি-সেলকে সিডি৪ ও কিলার টি-সেলকে আলাদা করেন সিডি৮ প্রোটিন দ্বারা। সাধারণত এই কোষগুলো ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় করে। তবে সাকাগুচি ইমিউন সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়ের খোঁজ করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এ নিয়ে গবেষণার পর ১৯৯৫ সালে নতুন ধরনের টি-সেলটি সামনে আনেন। 

‘দ্য জার্নাল অব ইমিউনলজি’তে সাকাগুচি দেখান, নতুন টি-সেল সিডি২৫ নামক প্রোটিন বহন করে। যেটির উপস্থিতি ইমিউন সিস্টেমকে শান্ত রাখে।

সাকাগুচি যখন টি-সেল নিয়ে কাজ করছিলেন তখন অপর দুই গবেষক মেরি ব্রাঙ্কো ও ফ্রেড র্যা মসডেল মনোযোগ দেন অটোইমিউন থেকে সুস্থ হওয়া ইঁদুরের জিন খুঁজে বের করতে। তারা নতুন আবিষ্কৃত জিনগুলোর তথ্য সংরক্ষণ করতে করতে এক সময় ‘এফওএক্সপি৩’ নামের মানব সংস্করণের জিন খুঁজে পান। যেটির ত্রুটির কারণে অটোইমিউন রোগ দেখা দেয়। এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটি অটোইমিউন রোগের গবেষণায় নতুন গতি আনে। 

যেভাবে কাজ করে

অটোইমিউন রোগের ক্ষেত্রে গবেষকরা নিয়ন্ত্রণকারী টি-সেলের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। প্রাথমিক গবেষণায় তাঁরা রোগীদের ইন্টারলিউকিন-২ সাইটোকাইন (এক ধরনের প্রোটিন) দিচ্ছেন যা নিয়ন্ত্রণকারী টি-সেলের বৃদ্ধি ও সক্রিয়তাকে বাড়িয়ে তোলে। 

আরেকটি কৌশল হলো, রোগীর দেহ থেকে নিয়ন্ত্রণকারী টি-সেল আলাদা করে ল্যাবরেটরিতে তা বৃদ্ধি করা এবং পরে তা আবার রোগীর দেহে প্রবেশ করানো। এতে রোগীর শরীরে নিয়ন্ত্রণকারী টি-সেলের সংখ্যা বেড়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে, গবেষকরা এই টি-সেলগুলোর জিনগত পরিবর্তন আনেন যাতে এগুলোতে অ্যান্টিবডি যুক্ত হয়। পরে এই কোষগুলোকে নির্দিষ্টভাবে কোনো প্রতিস্থাপিত যকৃৎ বা কিডনিতে পাঠান, যাতে সেগুলো ওই অঙ্গকে রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে করে। 

দ্য নোবেল প্রাইজের ওয়েবসাইটের নিবন্ধে বলা হয়েছে, গবেষকরা নিয়ন্ত্রণক টি-সেল ব্যবহার করে রোগ মোকাবিলার আরও নানা উপায় নিয়ে পরীক্ষা করছেন।

পূর্ববর্তী খবর পড়ুন

কাজী নজরুল ইসলাম (২৪ মে ১৮৯৯ – ২৯ আগস্ট ১৯৭৬)

পরবর্তী খবর পড়ুন

জসীম উদ্‌দীন (১ জানুয়ারি ১৯০৩ - ১৩ মার্চ ১৯৭৬)