আজ সোমবার | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫

 শিরোনাম
রোজা ও পূজা নিয়ে মন্তব্য: জামায়াত প্রার্থী শিশির মনিরের বিরুদ্ধে মামলা জৈন্তাপুরে গেইটলক বাসে তল্লাশি চালিয়ে ভারতীয় মদসহ আটক ১ আজ থেকে সিলেটে রাত সাড়ে ৯ টার পর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপ: কঠিন গ্রুপে কোন দল, কারা পেল সহজ প্রতিপক্ষ নির্বাচন ভণ্ডুল করার পায়তারা চলছে: শফিকুর রহমান ওসমানী বিমানবন্দরে বিদেশী সিগারেট ও ৬ আইফোন জব্দ বিয়ানীবাজার উপজেলা ছাত্র জমিয়তের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশনেত্রীর দিকে চেয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকা প্রয়োজন : অ্যাড. এমরান আহমদ চৌধুরী খালেদা জিয়ার জন্য সারা দেশে বিশেষ দোয়া সিলেটে হাজারও দৌড়বিদের অংশগ্রহণে হাফ ম্যারাথন

তরুণ-তরুণীর বন্ধুত্ব নিয়ে ইসলাম কী বলে

তরুণ-তরুণীর বন্ধুত্ব নিয়ে ইসলাম কী বলে

ইসলাম মানবিক সম্পর্ককে অনুমোদন করলেও, তরুণ-তরুণীর অবাধ মেলামেশা বা 'স্মার্ট বন্ধুত্বে' নৈতিকতার সীমানা টেনেছে। নির্জনতা ও অপ্রয়োজনীয় ঘনিষ্ঠতা থেকে বিরত থাকতে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সময়ের পালাবদলে মানুষের সম্পর্কও বদলে যায়। একসময় বন্ধুত্ব মানে ছিল সহমর্মিতা, দায়িত্ব আর সম্মানের বন্ধন। এখন সেই বন্ধুত্বে যোগ হয়েছে এক নতুন রঙ অবাধ মেলামেশা, সোশ্যাল মিডিয়ার কথোপকথন, অন্তহীন ‘চ্যাট’ আর আবেগের লেনদেন। 

 

আধুনিকতার ঝলকে এই সম্পর্কগুলো দেখতে যতই সুন্দর লাগুক, এর অন্তরালে লুকিয়ে থাকে এক সূক্ষ্ম নৈতিক সংকট। প্রশ্নটা জাগে ইসলাম এই বন্ধুত্বকে কীভাবে দেখে? 

ইসলাম মানবিক সম্পর্ককে সীমাবদ্ধ করে না, বরং তা পরিশুদ্ধতার আলোয় স্নাত করতে শেখায়। 

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা যেন দৃষ্টি নত রাখে ও লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র।’ (সুরা আন-নূর, আয়াত ৩০)

এবং নারীদের উদ্দেশে একই আদেশ, ‘মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন দৃষ্টি নত রাখে, লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করে এবং নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।’ (সুরা আন-নূর, আয়াত ৩১)

এই আয়াতদ্বয় আসলে সম্পর্কের এক দার্শনিক সীমানা টেনে দেয় যেখানে শালীনতা হচ্ছে আত্মার বর্ম, আর সংযম হচ্ছে চরিত্রের অলংকার। 

রাসুলুল্লাহ সা. সতর্ক করে বলেছেন, ‘যখন কোনো নারী ও পুরুষ নির্জনে অবস্থান করে, তখন তাদের তৃতীয় জন হয় শয়তান।’ (তিরমিজি, হাদিস ১১৭১

অতএব, ইসলাম বন্ধুত্ব নিষিদ্ধ করেনি, কিন্তু সীমাহীন বন্ধুত্বের দরজায় স্পষ্টভাবে ‘সতর্কতা’র সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছে। 

 

ইমাম ইবনু কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, ‘নারী–পুরুষের অপ্রয়োজনীয় ঘনিষ্ঠতা হৃদয়ের রোগ সৃষ্টি করে, যা পাপের দ্বার উন্মুক্ত করে।’ (আল–জাওয়াবুল কাফি, পৃ. ১২৪

ইমাম নববী (রহ.) মন্তব্য করেন, ‘যে সম্পর্ক মানুষকে আল্লাহর স্মৃতি থেকে দূরে নিয়ে যায়, তা বন্ধুত্ব নয়, বরং তা ফিতনার সূচনা।’ 

আজকের তথাকথিত ‘স্মার্ট বন্ধুত্ব’ বা ‘বেস্ট ফ্রেন্ড কালচার’ অনেক সময় আবেগের জোয়ারে গুনাহের স্রোতে পরিণত হয়। 

মোবাইল স্ক্রিনের আড়ালে জন্ম নেয় এমন সম্পর্ক, যা শুরু হয় নিরীহ কথোপকথনে—শেষ হয় আত্মিক শূন্যতায়। ইসলাম এই ঝুঁকি থেকে বাঁচার জন্যই শালীনতা ও সংযমের কঠোর বিধান দিয়েছে। 

তবে বাস্তবতার মাটিতে দাঁড়িয়ে ইসলাম কোনো কাল্পনিক বিচ্ছিন্নতা চায় না। শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র বা সামাজিক দায়িত্বে নারী–পুরুষের সহযোগিতা হতে পারে, কিন্তু তা যেন উদ্দেশ্যনির্ভর, সম্মাননির্ভর এবং সীমার মধ্যে আবদ্ধ থাকে। বন্ধুত্ব তখনই পবিত্র, যখন তা আত্মার উন্নতি ঘটায়, নয়তো তা পরিণত হয় আত্মপ্রবঞ্চনায়। 

আজকের তরুণ প্রজন্মের জন্য এটাই ইসলামের বার্তা,অন্যের হৃদয় নয়, নিজের নৈতিকতাকে জয় করো। বন্ধুত্ব নয়, ভ্রাতৃত্বই ইসলামের ভাষা; যেখানে সম্পর্কের ভিত্তি আবেগ নয়, ঈমান।

লেখক: জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান,শিক্ষার্থী, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রো, মিশর

পূর্ববর্তী খবর পড়ুন

কাজী নজরুল ইসলাম (২৪ মে ১৮৯৯ – ২৯ আগস্ট ১৯৭৬)

পরবর্তী খবর পড়ুন

জসীম উদ্‌দীন (১ জানুয়ারি ১৯০৩ - ১৩ মার্চ ১৯৭৬)