ছবি: সংগৃহীত
বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনকে কেন্দ্র করে ছিল তাদের রাজনীতি। দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে কখনো দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করেননি। কিন্তু ২০২৩ সালের সিটি নির্বাচনে দলীয় নির্দেশনা না মেনে প্রার্থী হওয়ায় উল্ট-পাল্ট হয়ে যায় তাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। দল থেকে স্থায়ী বহিস্কার হন। এরপর অনেকবার আবেদন নিবেদন করেও দলের মন গলাতে পারেননি। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের নামের আগে থেকে ‘বহিস্কৃত’ তকমার অবসান ঘটেছে।
বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রাম ও ত্যাগ বিবেচনা করে প্রত্যাহার করা হয়েছে তাদের বহিস্কারাদেশ। গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় ঘরের সন্তানদের ফিরিয়ে নিয়েছে বিএনপি। বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার হওয়ায় দলের চেয়ারপার্সন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন তারা। ভবিষ্যতে আর এরকম ভুল না করারও অঙ্গিকার করছেন ক্ষমা পাওয়া নেতারা।
সিলেট জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন শেখ হাসিনার শাসনামলে ৫৪ মামলার আসামী ছিলেন। চারবার জেল খেটেছেন। জেলে পরিয়ে রাখা হতো ‘ডান্ডাবেড়ি’। কারান্তরিণ থাকায় শেষ সময়েও সুযোগ পাননি অসুস্থ বাবার সেবা করার। যেদিন সন্ধ্যায় কারামুক্ত হন, ওইদিন ফজরের পর মারা যান বাবা। ছাত্রদলের ত্যাগী ওই নেতাও দলে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়ে।
একই কারণে দল থেকে বহিস্কার হয়েছিলেন সিলেটের ত্যাগী নেতা হিসেবে পরিচিত মহানগর বিএনপির সহসভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ফরহাদ চৌধুরী শামীম। বিএনপির রাজনীতি করতে গিয়ে হয়েছেন হত্যা, গুমসহ অর্ধশত মামলার আসামী। হারিয়েছিলেন প্রিয় সহোদরকেও।
সিলেট সিটি করপোরেশনে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়ে যারা বহিস্কার হয়েছিলেন গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় কেন্দ্র থেকে তাদের ‘ক্ষমা’ করা হয়। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
২০২৩ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়ে দল থেকে স্থায়ী বহিস্কার হয়েছিলেন ৪৩ জন। বিএনপির রাজনীতিতে যাদের অনেকেরই রয়েছে ত্যাগ ও নির্যাতিত হওয়ার অনিঃশেষ কষ্টগাঁঁথা। শেষ পর্যন্ত ক্ষমা পেয়ে তারা ফিরেছেন দলে।
এদিকে, পদ হারানো ৪৩ নেতার মধ্যে সিসিক নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন- মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ফরহাদ চৌধুরী শামীম, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ তৌফিকুল হাদী, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন, ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রকিব তুহিন, ওয়ার্ড সদস্য নজরুল ইসলাম মুনিম, এ বি এম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল ও মহানগর মহিলা দলের সহসভাপতি মোছাম্মৎ রুহেনা খানম মুক্তা। তবে তাদের পদ টিকে ছিল মাত্র ১০ মাস। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এসে তাদেরকে অপসারিত করে। বহিস্কৃতরা বিভিন্ন সময় ক্ষমা চেয়ে দলের কাছে আবেদন করলেও কঠোর সিদ্ধান্তে অনড় থাকে দল।
এ প্রসঙ্গে সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন বলেন, ‘ছাত্রদলের রাজনীতি করতে গিয়ে রাজপথে হামলা, মামলার শিকার হয়েছি। জেল খেটেছি। শেষ সময়েও অসুস্থ বাবার পাশে থাকতে পারিনি। এক ভুলে সকল ত্যাগ-তিতিক্ষা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ক্ষমা করায় দলের হাইকমান্ডের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।’
সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ফরহাদ চৌধুরী শামীম বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতি করতে গিয়ে আমার ভাই প্রাণ দিয়েছে। আমি বার বার জেল খেটেছি। কারাগারে অমানবিক নির্যাতন সহেছি। এলাকার মানুষের চাপে গত সিসিক নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলাম। এই ভুলের জন্য দলের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। দল ক্ষমা করায় চেয়ারপার্সন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। জীবনে আর দ্বিতীয়বার এই ভুল হবে না।
বৈরাগীবাজার নিউজ ডেস্ক
আইটি ল্যাব সলিউশন্স লি.